হিন্দু মুসলিম ঐক্যঃ একটি সোনার পাথরবাটি

যা গীতায় লেখা আছে, তা ই বাইবেলে লেখা আছে আর তা ই কোরাণেও লেখা আছে- এর থেকে বড় মিথ্যা আর কিছু নেই। সব ধর্ম সমান- এর থেকে বড় প্রবঞ্চনা আর কিছু নেই। সর্বধর্ম সমন্বয়ের ধ্বজাধারীদের অনেকে, কোনো রকমের পড়াশোনা ছাড়াই, শুধু শোনা কথার ভিত্তিতে এই কথাগুলো প্রচার করে থাকেন। সর্বধর্ম সমন্বয়ের এই উপদেশ যারা দিয়ে থাকেন, তারা কেউ গীতা ভালভাবে পড়েন না, কোরান আর বাইবেল তো পড়েনই নি একথা হলফ করে বলতে পারি। কিন্তু এই ধরণের ‘জ্ঞানী’ চারদিকে প্রচুর সংখ্যায় বিদ্যমান এবং এদের সামাজিক অধিষ্ঠানও বেশ উঁচুতেই! কিন্তু হিন্দু-মুসলিম ঐক্য না হলে না কি দেশগঠন হবে না! সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি না কি এমনই মূল্যবান বস্তু, যার জন্য হিন্দুদের ধন-মান-প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে, ভারতের হিন্দুদের উপরে মুসলিম হানাদারদের নৃশংস অত্যাচারের কথা মুখে আনা যাবে না, অসংখ্য নারীধর্ষণের করুণ কাহিনী ভুলে যেতে হবে, হিন্দু নরনারীদের ভারত থেকে নিয়ে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দাস বাজারে বিক্রি করার অপমানজনক ঘটনা লুকিয়ে ফেলতে হবে, অসংখ্য মন্দির ভেঙে মসজিদ বানানোর ইতিহাসকে চাপা দিয়ে দিতে হবে, দেশ ভাঙতে চাইলে তা মেনে নিতে হবে, ভারতের খেয়ে ভারতের পরে পাকিস্তান জিন্দাবাদের স্লোগান দিলে তা মেনে নিতে হবে, আরও কত কি করতে হবে শুধুমাত্র হিন্দু মুসলিম ঐক্যের স্বার্থে!

কিন্তু হিন্দু মুসলিম ঐক্য কি আদৌ সম্ভব? ঐক্য বা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য প্রতিটি পক্ষকে একমত হতে হয়, পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্কের উপরে আস্থা রাখতে হয়। হিন্দুর চোখে বসুধৈব কুটুম্বকম অর্থাৎ বিশ্বমানব আমার আত্মীয়। আমরা সর্বজীবে শিব দর্শন করে থাকি। আমরা বিশ্বাস করি যত মত তত পথ। বহুদেবতার উপাসনাতে আমাদের আপত্তি নেই। আমাদের ঈশ্বর বলেছেন- যে আমায় যে রূপে উপাসনা করে, সে আমাকে সেই রূপেই পেয়ে থাকে। আমরা শ্যামা সঙ্গীত গেয়ে থাকি- যে তোমায় যেভাবে ডাকে, তাতে তুমি হও মা রাজী। হিন্দুরা যেমন মন্দিরে মাথা ঠেকায়, মাজারেও ফুল দেয়।

পক্ষান্তরে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী এই প্রসঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে। তাদের বিশ্বাস- ‘লা ইলাহ ই ইল্লাল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত আর অন্য কোনো উপাস্য নেই। তারা আরও বিশ্বাস করে, ‘মোহম্মদুর রসূলাল্লাহ’ অর্থাৎ হজরত মহম্মদ আল্লার রসূল (দূত)। যারা এই দুটি বিশ্বাস করে এবং আল্লা ও তার রসূলের প্রতি সম্পূর্ণ সমর্পিত, তারাই ঈমানদার, তারাই মোমিন এবং তারাই মুসলমান।

আর যারা আল্লা ব্যতীত অন্য এক অথবা একাধিক দেবতার উপাসনা করেন ইসলামের পরিভাষায় তারা হলেন অংশীবাদী বা মুশরিক। কারণ তারা আল্লা ব্যতীত অন্য উপাস্যকে আল্লাহর শরিক বা অংশীদার করেছেন। আল্লার শরিক বা অংশীদারীতে বিশ্বাস করা ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বোচ্চ পাপ আর এই পাপের নাম ‘শিরক’। যারা এই শিরক পাপ করে থাকেন, তাদের কোনো ক্ষমা নেই- “আল্লা কেবল শিরকের পাপই মাফ করেন না। আর যত পাপ আছে, ইচ্ছা করলে মাফ করে দেন” (কোরাণঃ ৪/৪৮)। “আল্লার কাছে কেবল শিরক-ই ক্ষমার অযোগ্য……”(কোরাণঃ ৪/১১৬)।

যারা আল্লাকে উপাস্য বলে মানে না এবং হজরত মহম্মদদের নবীত্বে আস্থা রাখে না, ইসলামের পরিভাষায় তারা হল কাফের। কুফ্র অর্থাৎ বিদ্রোহ থেকেই কাফের (বিদ্রোহী) শব্দের উৎপত্তি। এই বিদ্রোহী বা কাফেররা ইসলামের ঘোষিত শত্রু – “হে নবী! তুমি আল্লার পথে লড়াই করো। ঈমানদার লোকেদের লড়াই করতে উদ্বুদ্ধ করো। আল্লা অতি শীঘ্র কাফেরদের শক্তি চূর্ণ করে দেবেন” (কোরানঃ ৪/৮৪)।

এথেকেই ভারতের একশ কোটি অমুসলমান, যারা মুশরিক এবং কাফের- দুটোই, তাদের প্রতি তাদের প্রতিবেশী ঈমানদার মুসলমানদের মনোভাব কি রকম, তা সহজেই অনুমান করা যায়। একজন মুসলমান তার প্রতিবেশী হিন্দুকে কোন চোখে দেখে থাকে সে কথা যারা ইসলামের ধর্মতত্ব জানে না, কোনো দিন উপলব্ধি করতে পারবে না। বাবাসাহেব আম্বেদকরের মতে, “মুসলমানদের কাছে হিন্দু কাফির। একজন কাফির সম্মানের যোগ্য নয়। তিনি নিম্ন-জাত এবং মর্যাদাহীন। তাই যে দেশ কাফির দ্বারা শাসিত হয় তা একজন মুসলমানের কাছে দার-উল-হারব” (Pakistan or Partition of India, Chapter XII)।

আমরা অর্থাৎ হিন্দুরা যেহেতু আল্লার উপাসনা করি না, তাই আমরা কাফের। আবার আমাদের অধিকাংশই বহুদেবতার পূজা করে থাকি। তাই আমরা মুশরিকও। আমাদের মত কাফের এবং মুশরিক হিন্দুদের প্রতি মুসলমানদের মনে আল্লা চূড়ান্ত ঘৃণা ও বিদ্বেষ তৈরি করেছেন। উদাহরণ স্বরূপ- “তারা প্রাণীকূলের মধ্যে নিকৃষ্টতম” (কোরানঃ ৮/৫৫)। “তারা আসলে পশুর সমান” (কোরানঃ ৭/১৭৯)। “এদের শেষ পরিণতি হবে নরক” (কোরানঃ ৪/১২১)। “একজন ঈমানদার ক্রীতদাস একজন উচ্চবংশীয় মুশরিক অপেক্ষা অনেক ভাল” (কোরানঃ ২/২২১)। “মুশরিকরা নাপাক, তারা যেন মসজিদ-এ-হারামের (কাবা) নিকটেও না আসতে পারে” (কোরানঃ ৯/২৮)। “কাফেরদের উপরে আল্লা, ফেরেস্তা সহ সকল মানুষের অভিশাপ পড়বে” (কোরানঃ ২/১৬১)। “কাফেররা দোজখের ইন্ধন হয়ে থাকবে” (কোরানঃ ৩/১০)। “কাফেরদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি” (কোরানঃ ৩/৯১, ১৭৬, ১৭৭, ১৭৮, ৪/১৫১, ৫/৩৬)। “আমি তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করবো। যখন তাদের চামড়া গলে যাবে, সেই স্থানে নতুন চামড়া সৃষ্টি করে দেবো যাতে তারা আযাবের স্বাদ সম্পূর্ণরূপে  গ্রহণ করতে পারে” (কোরানঃ ৪/৫৬)। “তারা নিঃসন্দেহে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে এবং চিরকাল তাতে থাকবে। এরা নিকৃষ্টতম সৃষ্টি(কোরানঃ ৯৮/৬)।

আমাদের প্রতি মুসলমানদের যদি এই ধরণের ঘৃণা এবং বিদ্বেষমূলক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে থাকে, তবে তাদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করা কতটা সম্মানজনক অথবা কতটা সম্ভব, তা বিচার করার দায়িত্ব পাঠকের। হিন্দু মুসলিম ঐক্য সম্পর্কে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘বর্তমান হিন্দু মুসলিম সমস্যা’ প্রবন্ধে  লিখেছেন, “…….বস্তুতঃ, মুসলমান যদি কখনও বলে—হিন্দুর সহিত মিলন করিতে চাই, সে যে ছলনা ছাড়া আর কি হইতে পারে, ভাবিয়া পাওয়া কঠিন। একদিন মুসলমান লুণ্ঠনের জন্যই ভারতে প্রবেশ করিয়াছিল, রাজ্য প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য আসে নাই। সেদিন কেবল লুঠ করিয়াই ক্ষান্ত হয় নাই, মন্দির ধ্বংস করিয়াছে, প্রতিমা চূর্ণ করিয়াছে, নারীর সতীত্ব হানি করিয়াছে, বস্তুতঃ অপরের ধর্ম ও মনুষ্যত্বের উপরে যতখানি আঘাত ও অপমান করা যায়, কোথাও কোন সঙ্কোচ মানে নাই”।

যাইহোক, এতো গেল মুশরিক এবং কাফেরদের প্রতি একজন ঈমানদার মুসলমানের দৃষ্টিভঙ্গীর কথা। এবারে দেখা যাক মুশরিক এবং কাফেরদের প্রতি মুসলমানদের কর্তব্য কি? শুধু ঘৃণা ও বিদ্বেষ মনের মধ্যে পোষণ করে এদের থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখাই কি যথেষ্ট? না কি আরও কিছু করণীয় আছে?

দেখা যাক, আল্লাহ স্বয়ং তার ঈমানদার বান্দাদের এই প্রসঙ্গে কী নির্দেশ দিয়েছেন- ‘’পবিত্র মাস (রমজান) অতিক্রান্ত হইলে মুশরিকদের যেখানে পাইবে হত্যা করিবে। তাদেরকে ধরো, ঘেরাও করো, প্রতিটি ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে বসে থাকো (কোরানঃ ৯/৫)’’, “তাদেরকে হত্যা করো, কঠিন শাস্তির সুসংবাদ দাও (কোরানঃ ৩/২১)”, “আমি এখনই এই কাফেরদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করে দিচ্ছি, তোমরা তাদের ঘাড়ের উপরে ও জোড়ায় জোড়ায় আঘাত করো (কোরানঃ ৮/১২)”। “হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা কাফেরদের সাথে লড়াই করো। যেন শেষ পর্যন্ত ফেতনা খতম হয়ে যায় এবং দ্বীন সম্পূর্ণরূপে আল্লার জন্য হয়ে যায়(কোরানঃ ৮/৩৯)”, “তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো, আল্লা তোমাদের হাতে তাদের শাস্তি প্রদান করবেন এবং তাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করবেন (কোরানঃ ৯/১৪)”। “হে নবী! কাফের ও মুনাফেকদের বিরুদ্ধে পূর্ণশক্তিতে জেহাদ করো এবং তাদের সম্পর্কে কঠোর নীতি অবলম্বন করো (কোরানঃ ৯/৭৩)”। “তাদের মধ্য হতে কাউকেই বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না, যতক্ষণ না সে আল্লার পথে হিজরত করে আসে। আর যদি সে হিজরত না করে, তবে যখানেই পাবে তাকে ধরবে এবং হত্যা করবে (কোরানঃ ৪/৮৯)”।

অনেকেই বলবেন যে আমাদের তো অনেক মুসলমান বন্ধুবান্ধব আছে। তারা তো আমাদের প্রতি কোনো ঘৃণা অথবা বিদ্বেষ পোষণ করে না। তাদের জ্ঞাতার্থে জানাই এই প্রসঙ্গে ইসলামের পবিত্র ঐশী গ্রন্থ কী বলছে, “মোমিনরা যেন কখনো কাফেরদের বন্ধু, পৃষ্ঠপোষক ও সহযাত্রীরূপে গ্রহণ না করে। যে এরূপ করবে, আল্লার সাথে তার কোনো সম্পর্ক থাকবে না (কোরানঃ ৩/২৮)”। কাফেরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না (কোরানঃ ৪/১৪৪)। কাফেরদেরকে বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষক বানিও না (কোরানঃ ৫/৫৭)। “হে ঈমানদার লোকেরা! যুদ্ধ করো সেই সব সত্য অমান্যকারী লোকেদের বিরুদ্ধে যারা তোমাদের নিকটবর্তী রয়েছে। তারা যেন তোমাদের মধ্যে দৃঢ়তা ও কঠোরতা দেখতে পায়” (কোরানঃ ৯/১২৩)। এ কি শুধু বইয়ে লেখাতেই শেষ? তাহলে ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের অভিজ্ঞতা শুনুন, “বাল্যকালে যে সব মুসলমানের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল, যাদের বাড়িতে সর্বদা যাতায়াত ছিল, পাকিস্তান হওয়ার পর যে দু-চারজন হিন্দু আমাদের গ্রামে ছিল, তাদের উপর এরাও অত্যাচার করেছে শুনেছি। সেই লোকেরাই আমাদের গ্রামের বাড়ি ঘর সব জোর করে দখল করে নিয়েছে। হিন্দু মুসলমানের পারস্পরিক সম্পর্কের এমন আমূল পরিবর্তন একই জীবনে দেখতে পেলাম।” (জীবনের স্মৃতিদীপেঃ পৃষ্ঠা-৯)

যে হিন্দুরা হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই তত্বে বিশ্বাস করেন তাদের জানা দরকার যে একজন মুসলমান মারা গেলে অন্য মুসলমানদের বলার রীতি আছে ‘ইন্নলিল্লাহে ওয়াইনা ইলাহে রাজেউন’ অর্থাৎ এই মুসলমান ভাইয়ের পবিত্র মৃতদেহটি যেন চিরশান্তিতে কবরে শায়িত থাকে। পক্ষান্তরে একজন অমুসলমানের মৃতদেহ চোখে পড়লে তারা বলে থাকে ‘ফি নারি জাহান্নুম খালিদুন্নাফিহা’ অর্থাৎ এই কাফের যেন জাহান্নামের আগুনে জ্বলে পুড়ে কষ্ট পায়। মরার পরেও যারা মুসলমানদের বিদ্বেষপূর্ণ অভিশাপের হাত থেকে রেহাই পায় না, তাদের কি জীবদ্দশায় মুসলমানদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের স্বপ্নে বিভোর থাকা যুক্তিযুক্ত?

প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে সব মুসলমান কি কোরান আর হাদিসের নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য?  জেনে রাখা দরকার যে কোরান হল স্বয়ং আল্লার ওহি বা প্রত্যাদেশ। আর হাদিস হল নবী হজরত মহম্মদের কথা ও কাজের বিবরণ। তাই এর উপরে সামান্য অনাস্থা মেনে নেওয়ার কোনো অবকাশ ইসলামে নেই। অর্থাৎ কেরান আর হাদিসের একটা অক্ষরের উপরেও যে অবিশ্বাস করে, সে আর ঈমানদার মোমিন থাকে না। আল্লা বলেছেন, “…তোমরা কি ঐশীগ্রন্থের একাংশ বিশ্বাস করো আর অপর অংশকে অবিশ্বাস করো? জেনে রাখো, তোমাদের মধ্যে যাদেরই এরূপ আচরণ হবে তাদের এছাড়া আর কি শাস্তি হতে পারে যে তারা পার্থিব জীবনে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হতে থাকবে এবং পরকালে তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে নিক্ষেপ করা হবে…” (কোরানঃ ২/৮৫)। যে মুসলমান ব্যক্তি মনে মনে কোরান-হাদিসে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক অবিশ্বাস করলেও আচরণে তা প্রকাশ করে না, অর্থাৎ কপটতার আশ্রয় নেয়, ইসলামের পরিভাষায় তাকে ‘মুনাফেক’ বলা হয়। আর যে মুসলমান তার অবিশ্বাসকে প্রকাশ্যে ঘোষণা করে ইসলাম পরিত্যাগ করে, ইসলামের পরিভাষায় তাকে বলা হয় ‘মুর্তাদ’। “নবী করিম সাল্লালহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হুকুম রয়েছে, কেউ দ্বীন বদলে ফেললে তাকে হত্যা করো” (বোখারী শরিফ হাদিসঃ ৩২৫৫)। অর্থাৎ একজন মুর্তাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।“আর মৃত্যুর পরে একজন মুনাফেকের স্থান হবে সর্বাপেক্ষা ভয়ঙ্কর নরক হাভিয়া দোজখে” কোরানঃ ৪/১৪৫)।

সুতরাং, কোরান আর হাদিসের পথনির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন না করে কেউ মুসলমান হতে পারে না। আল্লা ও নবীর কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ ব্যতীত মুসলমান হওয়া যায় না। মুসলমানদের কাছে আল্লার নির্দেশের উপরে আর কিছু নেই আর নবীর জীবন ও কর্মকাণ্ড তাদের কাছে হল তাদের ধর্মীয় কর্তব্যের মানদণ্ড। তাহলে ঈমানে যে সমস্ত মুসলমানের কমবেশী ঘাটতি আছে তাদের কী হবে? এই আংশিক মুসলমানদের সম্পূর্ণ মুসলমান বা সহি মুসলমান বানানোর জন্য আছে পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ ও মাদ্রাসার নেটওয়ার্ক। মৌলবী-ইমামদের কঠোর মনিটরিং। আছে জালসা, ওয়াজ – সিস্টেম্যাটিক ব্রেনওয়াশিং এর সমস্ত ব্যবস্থা এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় ফান্ডিং।

নবী হজরত মহম্মদ প্রত্যেক মুসলমানের কাছে রোল মডেল। নবী নিজের হাতে কাবাগৃহের মূর্তি ভঙে পৃথিবী থেকে মূর্তি পূজার রীতিকে মুছে ফেলার কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি মদীনা থেকে অমুসলমানদের বিতাড়িত করতে সক্ষম হলেও সমগ্র আরবকে কাফেরমুক্ত করে যেতে পারেন নি। কারণ তিনি মক্কা বিজয়ের মাত্র দুবছর পরেই মারা যান। কিন্তু মৃত্যুর সময় তার অনুগামীদের এই অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়ে যান- মুশরিকদের আরব থেকে তাড়াও (মুসলিম শরীফঃ ৮০১৮)। গজবা ই হিন্দ নামের এক হাদিস থেকে জানা যায় যে হজরত মহম্মদ তার ঘনিষ্ঠদের কাছে হিন্দুস্থান বিজয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তার এই ইচ্ছা বাস্তবায়িত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম সাফল্য আসে ৭১২ সালে, মহম্মদ বিন কাশিমের সিন্ধু বিজয়ের মধ্য দিয়ে। পরবর্তী বড় সাফল্য ১৯৪৭ সালে, ভারত ভেঙে পাকিস্তান সৃষ্টি। কিন্তু নবীর ইচ্ছা আজও অসম্পূর্ণ। একে সম্পূর্ণ করা যদি একজন সাচ্চা মুসলমানের ধর্মীয় অনুপ্রেরণা হয়, তাহলে একজন হিন্দুর সাথে তার সম্পর্ক কি দাঁড়াবে? ভারতের একতা ও অখণ্ডতার প্রতি একজন সাচ্চা মুসলমানের দায়বদ্ধতা কতটা থাকবে?

ডঃ আম্বেদকর এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “এটাও উল্লেখ করা যেতে পারে যে যে সকল মুসলমানেরা দার-উল-হারব অর্থাৎ অমুসলমান শাসিত দেশে বসবাস করেন, তাদের জন্য হিজরত বা পালানোই একমাত্র উপায় নয়। জিহাদ (ক্রুসেড) নামক মুসলিম আইনে (শরিয়া) আরেকটি আদেশ রয়েছে যা বলে ‘একজন মুসলিম শাসকের দায়িত্ব হয়ে যায় ইসলামের শাসনকে প্রসারিত করা যতক্ষণ না সমগ্র বিশ্বকে এর অধীনস্থ করা হয়। বিশ্ব দুটি শিবিরে বিভক্ত- দার-উল-ইসলাম (ইসলামের আবাস), দার-উল-হারব (যুদ্ধের আবাস)। …..মুসলিম শাসকের দায়িত্ব, দার-উল-হারবকে দার-উল-ইসলামে রূপান্তরিত করা।‘ যেমন ভারতে মুসলমানদের হিজরত অবলম্বনের উদাহরণ রয়েছে, তেমনি এমন উদাহরণ রয়েছে যে তারা জিহাদ ঘোষণা করতে দ্বিধা করেনি।“(Pakistan or Partition of India, Chapter XII)।

১৯২৪ সালে একটি বাংলা কাগজের সম্পাদক বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারের রিপোর্টে বলা হয়েছে, “কবির মতে, আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা হিন্দু-মুসলমান ঐক্য একটি বাস্তব সত্যে পরিণত হওয়া প্রায় অসম্ভব করে তুলছিল, তা হ’ল মুসলমানরা তাদের দেশপ্রেমকে কোনও একটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারে না। কবি বলেন, তিনি অনেক মুসলমানকে খোলাখুলিভাবে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে কোনো মুসলমান শক্তি ভারত আক্রমণ করলে তারা তাদের দেশরক্ষায় হিন্দু প্রতিবেশীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে কিনা। তাদের কাছ থেকে যে উত্তর পেয়েছেন তাতে তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। তিনি বলেন যে, তিনি নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন যে, মোহাম্মদ আলীর মতো লোকও ঘোষণা করেছেন যে, কোন অবস্থাতেই কোন মুসলমানের জন্য, তার দেশ যাই হোক না কেন, অন্য কোন মুসলমানের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো বৈধ নয়” (Through Indian Eyes” in the Times of India dated 18-4-1924)।

একজন মুসলমানের একটাই পরিচয়- সে একজন মুসলমান। সে আল্লা এবং নবীর প্রতি সমর্পিত, আর কোনো দায়বদ্ধতা তার থাকার অনুমতি ইসলাম তাকে দেয় না। আমাদের মত মানলেও হয়, না মানলেও হয় গোছের নমনীয়তার অবকাশ ইসলামে নেই। ইসলামের তত্ব অনুযায়ী যারা সম্পূর্ণ বিশ্বাসী তারাই মুসলমান। যাদের বিশ্বাসে ঘাটতি আছে তারা কাফের কিংবা মুনাফেক কিংবা মুর্তাদ কিংবা মুশরিক হতে পারে কিন্তু মুসলমান কখনোই নয়। তাহলে হিন্দু-মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ কিভাবে সম্ভব? এই প্রসঙ্গে ডঃ আম্বেদকর বলেছেন, “ইসলামের ভ্রাতৃত্ব মানুষের বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্ব নয়। এটি শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য মুসলমানদের ভ্রাতৃত্ব। ইসলামে একটি ভ্রাতৃত্ববোধ আছে, কিন্তু এর সুবিধা মুসলিম সমাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সমাজের বাইরে যারা আছেন তাদের জন্য অবজ্ঞা ও শত্রুতা ছাড়া আর কিছুই নেই” (Pakistan or Partition of India, Chapter XII) ।

ডঃ আম্বেদকরের মতে, হিন্দু এবং মুসলমান সুদীর্ঘ সময় ধরে ভারতের মাটিতে দুটি যুদ্ধরত জাতি। এদের অতীত হচ্ছে পারস্পরিক ধ্বংসের ইতিহাস, পারস্পরিক শত্রুতার ইতিহাস (Pakistan or Partition of India Page-41)।  ভাই পরমানন্দ প্রকাশিত একটি হ্যান্ডবিলের উল্লেখ করে ডঃ আম্বেদকর লিখেছেন, ইতিহাসে হিন্দুরা পৃথ্বীরাজ, রাণা প্রতাপ, ছত্রপতি শিবাজী এবং বান্দা বৈরাগীর স্মৃতিকে শ্রদ্ধা করে, যারা এই ভূমির সম্মান ও স্বাধীনতার জন্য (মুসলমানদের বিরুদ্ধে) লড়াই করেছিল, অন্যদিকে মুসলমানরা মুহাম্মদ বিন কাসিমের মতো ভারত আক্রমণকারী এবং আওরঙ্গজেবের মতো শাসকদের তাদের জাতীয় বীর হিসাবে দেখে। বাবাসাহেব এর সাথে যুক্ত করছেন, ধার্মিক ক্ষেত্রে হিন্দুরা প্রেরণা গ্রহণ করে রামায়ণ, মহাভারত, গীতা থেকে। পক্ষান্তরে মুসলমানদের প্রেরণার উৎস হচ্ছে কোরান এবং হাদীস। এইভাবে দেখা যায় যে বিষয়গুলি হিন্দু আর মুসলমানের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে সেগুলি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের সূত্রগুলির তুলনায় অনেক বেশী শক্তিশালী। (Pakistan or Partition of India, Page-42)।

শ্রীযুক্ত কালিদাস নাগ-কে লেখা চিঠি থেকে আমরা হিন্দু মুসলিম ঐক্য সম্পর্কে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দৃষ্টিভঙ্গী জানতে পারিঃ- “পৃথিবীতে দুটি ধর্মসম্প্রদায় আছে অন্য সমস্ত ধর্মমতের সঙ্গে যাদের বিরুদ্ধতা অত্যুগ্র– সে হচ্ছে খৃস্টান আর মুসলমান ধর্ম। তারা নিজের ধর্মকে পালন করেই সন্তুষ্ট নয়, অন্য ধর্মকে সংহার করতে উদ্যত। এইজন্যে তাদের ধর্ম গ্রহণ করা ছাড়া তাদের সঙ্গে মেলবার অন্য কোনো উপায় নেই।“

হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক সম্বন্ধে স্বনামধন্য বাঙালী কবি অন্নদাশঙ্কর রায়ের ভাযায়, “যাঁরা বিদেশ থেকে এসেছেন ও আজও তা মনে রেখেছেন, যাঁরা জলের উপর তেলের মত থাকবেন বলে স্থির করেছেন আবহমান কাল, দেশের অতীত সম্বন্ধে যাঁদের অনুসন্ধিৎসা ও বর্তমান সম্বন্ধে যাঁদের বেদনা বোধ নেই, রাষ্ট্রের ভিতরে আর একটা রাষ্ট্র রচনাই যাঁদের স্বপ্ন, আমরা তাঁদের কে….?” (মুসলিম সাহিত্য সমাজঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)।

বুলবুল পত্রিকায় মহম্মদ হাবিবুল্লার প্রবন্ধ ‘অবাঞ্ছিত ব্যবধান’ এর জবাবে অন্নদাশঙ্কর রায় লেখেন, “ঐক্য জিনিসটা অর্গ্যানিক; হাড়ের সঙ্গে মাংস জুড়লে যেমন মানুয হয় না, তেমনি হিন্দুর সঙ্গে মুসলমান জুড়লে বাঙ্গালী হয় না, ভারতীয় হয় না।”

এবার হিন্দু মুসলিম ঐক্য প্রসঙ্গে ঋষি অরবিন্দ কি ভাবতেন দেখা যাক, “আমি দুঃখিত যে তারা (তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্ব) এই হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের প্রতি আবিষ্ট হয়ে আছে। সত্যকে উপেক্ষা করে কোনো লাভ নেই; একদিন হিন্দুদের মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে এবং তাদের অবশ্যই তার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। হিন্দু-মুসলিম ঐক্য মানে হিন্দুদের পরাধীনতা নয়”।(ঋষি অরবিন্দ ঘোষঃ India’s Rebirth; April 18, 1923)

ভারতে হিন্দু মুসলিম ঐক্যের ব্যর্থতার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ডঃ আম্বেদকর বলছেন, “হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের এই ব্যর্থতার আসল কারণ নিহিত রয়েছে এটা উপলব্ধি করতে না পারা যে, হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে বাধা হিসেবে যা দাঁড়িয়ে আছে তা নিছক পার্থক্যের বিষয় নয় এবং এই শত্রুতাকে বস্তুগত কারণের জন্য দায়ী করা যায় না। এই শত্রুতা এমন কারণগুলির দ্বারা গড়ে উঠেছে যা তাদের ঐতিহাসিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক বিদ্বেষ থেকে উদ্ভূত হয়েছে” (Pakistan or Partition of India, Chapter XII)।

ভারতে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের চেষ্টা কম হয় নি। পরাধীন ভারতে তখন একদিকে চলছে খিলাফত আন্দোলন, অন্যদিকে গান্ধীজীর নেতৃত্বে চলছে অসহযোগ। হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যের স্বপ্নে বুঁদ হয়ে আছেন গান্ধীজী। কিন্তু গান্ধীজীর স্বরাজের স্বপ্নের থেকে মুসলমানদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল খিলাফতকে বাঁচানো। এই পরিস্থিতিতে ভারতের খিলাফতিরা আফগানিস্তানের কাছে ভারত আক্রমণের আবেদন জানালো। গান্ধীজী আফগানিস্তানের আমিরকে বৃটিশ সরকারের সাথে কোনও চুক্তি না করার পরামর্শ দিয়েই ক্ষান্ত হলেন না, তিনি বললেন, “এক অর্থে, আফগানিস্তানের আমির যদি ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালান (ভারত আক্রমণ করেন) তবে আমি অবশ্যই তাকে সাহায্য করব। অর্থাৎ, আমি আমার দেশবাসীকে খোলাখুলিভাবে বলব যে, যে সরকার জাতির আস্থা হারিয়ে ফেলেছে তাকে ক্ষমতায় থাকতে সাহায্য করা অপরাধ হবে” (Pakistan or Partition of India, Page-186)। এই প্রসঙ্গে ডঃ আম্বেদকরের প্রশ্ন, “কোনও সুস্থ মস্তিষ্কের লোক হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের জন্য এই পর্যন্ত যেতে পারে?”

এখন দেখা যাক হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের সাধক গান্ধীজীর সম্পর্কে মুসলমানদের দৃষ্টিভঙ্গী কী ছিল? আলিগড় ও আজমীরে মোহাম্মদ আলী প্রসঙ্গক্রমে বলেন, “মিঃ গান্ধীর চরিত্র যতই বিশুদ্ধ হোক না কেন, আমার ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে আমি তাকে একজন চরিত্রহীন মুসলমানের চেয়ে নিকৃষ্ট বলে মনে করি।“ এই বক্তব্য ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেননি যে মোহাম্মদ আলী গান্ধীজী সম্পর্কে এই রকম ধারণা পোষণ করতে পারেন। লখনউয়ের আমিনাবাদ পার্কে এক সভায় মহম্মদ আলিকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি সত্যি সত্যিই একথা বলেছেন কি না। মোহাম্মদ আলী কোন দ্বিধা বা অনুশোচনা না করে উত্তর দিয়েছিলেন, “হ্যাঁ, আমার ধর্ম ও আকীদা অনুযায়ী আমি একজন ব্যভিচারী ও পতিত মুসলমানকেও মিঃ গান্ধীর চেয়ে ভালো বলে মনে করি”। এই প্রসঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপলব্ধি, “যে মুসলমানকে আজ ওরা প্রশ্রয় দিচ্ছে সেই মুসলমানেরাই একদিন মুষল ধরবে”।(অমিয় চক্রবর্ত্তীকে লেখা চিঠি, ১৫.১১.১৯৩৪, চিঠিপত্র :১১)

তৎকালীন সময়ে কংগ্রেসী নেতাদের হিন্দু মুসলিম ঐক্যের চেষ্টা সম্পর্কে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘বর্তমান হিন্দু মুসলিম সমস্যা’ প্রবন্ধে কি বলেছেন দেখা যাকঃ- “হিন্দু-মুসলমান-মিলন একটা গালভরা শব্দ, যুগে যুগে এমন অনেক গালভরা বাক্যই উদ্ভাবিত হইয়াছে, কিন্তু ঐ গাল-ভরানোর অতিরিক্ত সে আর কোন কাজেই আসে নাই। এ মোহ আমাদিগকে ত্যাগ করিতেই হইবে।…….মিলন হয় সমানে সমানে। শিক্ষা সমান করিয়া লইবার আশা আর যেই করুক আমি ত করি না। হাজার বৎসরে কুলায় নাই, আরও হাজার বৎসরে কুলাইবে না। এবং ইহাকেই মূলধন করিয়া যদি ইংরাজ তাড়াইতে হয় ত সে এখন থাক। মানুষের অন্য কাজ আছে। খিলাফৎ করিয়া, প্যাক্ট করিয়া, ডান ও বাঁ—দুই হাতে মুসলমানের পুচ্ছ চুলকাইয়া স্বরাজযুদ্ধে নামান যাইতে পারিবে, এ দুরাশা দুই-একজনার হয়ত ছিল, কিন্তু মনে মনে অধিকাংশেরই ছিল না। ……. বছর-কয়েক পূর্বে, মহাত্মার অহিংস অসহযোগের যুগে এমনি একটা কথা এদেশে বহু নেতায় মিলিয়া তারস্বরে ঘোষণা করিয়াছিলেন যে, হিন্দু-মুসলিম মিলন চাই-ই। চাই শুধু কেবল জিনিসটা ভাল বলিয়া নয়, চাই-ই এইজন্য যে, এ না হইলে স্বরাজ বল, স্বাধীনতা বল, তাহার কল্পনা করাও পাগলামি। কেন পাগলামি এ কথা যদি কেহ তখন জিজ্ঞাসা করিত, নেতৃবৃন্দেরা কি জবাব দিতেন তাঁহারাই জানেন, কিন্তু লেখায় বক্তৃতায় ও চীৎকারের বিস্তারে কথাটা এমনি বিপুলায়তন ও স্বতঃসিদ্ধ সত্য হইয়া গেল যে, এক পাগলা ছাড়া আর এত বড় পাগলামি করিবার দুঃসাহস কাহারও রহিল না। তার পরে এই মিলন-ছায়াবাজীর রোশনাই যোগাইতেই হিন্দুর প্রাণান্ত হইল”।

১৯৪৭ সালের ২০শে জুন যখন পূর্ব পাকিস্তান ভেঙে পশ্চিমবঙ্গের সৃষ্টি হল তখন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ২৫শে জুন একজন নিকটাত্মীয়কে চিঠি লিখলেন, “নতুন বঙ্গ ভাগ হয়ে গেল, ভালই হল। বাঙালী হিন্দুরা হাঁপ ছেড়ে বাঁচবে।”

এর পরেও আমরা বিভ্রান্ত! মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম….. শুনলেই আমাদের বিশ্বমানব চেতনা জেগে ওঠে। হিন্দু না ওরা মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোন জন…… শুনলেই আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ বিবেক জেগে ওঠে। এমন কি বাংলাদেশ থেকে পশ্চাদ্দেশে পদাঘাত খেয়ে ভারতে পালিয়ে আসা উদ্বাস্তু হিন্দুকেও বলতে শোনা যায়, “আমাগো আবদুল চাচা খুব ভাল মানুষ আছিলো। একদম ইন্ডিয়ার বর্ডার পর্যন্ত জানের বাজী লাগাইয়া আমাদের পৌঁছায় দিছিলো”। তারা শুধু বলে না যে তাদের গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ যে জমির উপরে ছিল, সেটা এখন সেই আবদুল চাচার দখলে। আর বলে না যে ওই সম্পত্তির সাথে সাথে “আমাদের সুন্দরী পিসিটারেও চাচা নিকা কইরা রাইখা দিছে”!

এই বিভ্রান্তির কারণও আছে। ইসলামের শব্দকোষে আল-তাকিয়া বলে একটা শব্দ আছে। এই শব্দের অর্থ হল ইসলামের রক্ষা এবং প্রসারের স্বার্থে প্রতিকূল পরিস্থিতির চাপে পড়ে নিজের আসলিয়ত বা সত্যকে গোপন রাখার জন্য ছলনার আশ্রয় নেওয়া। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আল-তাকিয়া বা ছলনার আশ্রয় নেওয়া মুসলমানদের ধর্মাচরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। “যার উপরে জুলুম করা সত্বেও তার অন্তরে বিশ্বাস অটুল থাকে, সে ছাড়া যে কেউ বিশ্বাসী হওয়ার পরে যদি আবার অবিশ্বাসী হয় এবং কুফ্রির জন্য মনকে উন্মুক্ত করে দেয়, তাদের উপরে আল্লার গজব আপতিত হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে শাস্তি” (কোরানঃ ১৬/১০৬)। এক বিশেষ পরিস্থিতিতে কোরানের এই আয়াতটা নাজিল হয়েছিল। একবার কাফেরদের হাতে বন্দী হয় হজরত মহম্মদের অনুগামী হজরত আম্মার, তার পিতা ইয়াসির, মাতা সুমাইয়া এবং আরও তিনজন। কাফেররা তাদের ইসলাম পরিত্যাগ করতে বলে এবং ইসলাম বিরোধী কয়েকটি বাক্য উচ্চারণ করতে বলে। আম্মার ছাড়া বাকী সকলে এই কাজে অসম্মত হওয়ায় তাদের হত্যা করা হয়। কিন্তু আম্মার কাফেরদের শর্ত অনুযায়ী ইসলাম বিরোধী বাক্যগুলি উচ্চারণ করলে কাফেররা তাকে মুক্তি দেয়। আম্মার ফিরে এসে হজরত মহম্মদের কাছে সব কথা খুলে বলে এবং জানতে চায় যে এতে তার কোনো গুনাহ হয়েছে কি না। তখন হজরত মহম্মদ তাকে বলেন যে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ইসলাম বিরোধী কথা বা কাজে গুনাহ হয় না, যদি অন্তরে বিশ্বাস অটল থাকে।

কোরানের ৩/২৮ এ আল্লা মোমিনদের জন্য এই তাকিয়া বা ছলনা জায়েজ করে দিয়েছেন- “…. মেমিনরা কখনো কাফেরদের বন্ধু, পৃষ্ঠপোষক অথবা সহযাত্রীরূপে স্বীকীর করবেন না। …অবশ্য জুলুম থেকে বাঁচার জন্য এইরূপ কর্মনীতি অবলম্বন করলে আল্লা তা ক্ষমা করে দেবেন।” আল তাকিয়ার ধর্মীয় অনুমোদনের আরও অনেক প্রমাণ আছে- “আবু জাফর বলেন, তাকিয়া আমার ও আমার পূর্বপুরুষের ধর্ম। যার তাকিয়া নেই, তার দ্বীন নেই”(আল কাফিঃ ১৩৫/২, মিরাত উল উকুলঃ ১৮০/৯)। “তাকিয়া দ্বীনের দশ ভাগের নয় ভাগ”(আল কাফিঃ ১৩৩/২)। “তাকিয়া ছেড়ে দিলে সে কাফের”(ফিকাহ আল রেযা)। এই কারণেই দেখা যায়, যতদিন মুসলমান সংখ্যালঘু, ততদিন তারা বিনয়ী, বন্ধুসুলভ এবং ততদিন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। ভারসাম্য এদিক থেকে ওদিক হলেই দেগঙ্গা, নলিয়াখালি, ধূলাগড়। ডেমোগ্রাফি বদলে গেলেই মূর্তিভাঙা, সরস্বতী পূজা বন্ধ করে স্কুলে নবীদিবস, হারাম হরিনাম সংকীর্তনের উপরে জেহাদী হামলা, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার বদলে শরিয়া আইন। এই তাকিয়া থেকেই মডারেট মুসলিম সমাজের জন্ম। এদের কাজ হল কোথাও জেহাদী সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটলেই ‘সন্ত্রাসের কোনো ধর্ম নেই’ বলে হুক্কাহুয়া শুরু করা।

ভারতের মত কাফের শাসিত দেশে বসবাসকারী মুসলমানদের জন্য ইসলামে দুটো বিকল্প বৈধ করা হয়েছে- “যে ব্যক্তি আল্লার দ্বীনের উপরে ঈমান এনেছেন, তার পক্ষে কাফেরী সমাজব্যবস্থার অধীনে বসবাস করা মাত্র দুই ক্ষেত্রেই বৈধ হতে পারে। প্রথম- সে সেই ভূখন্ডে ইসলামকে বিজয়ী করার এবং কাফেরী ব্যবস্থাকে ইসলামী ব্যবস্থায় পরিবর্তিত করার জন্য সাধনা করতে থাকবে। যেমন নবীগণ এবং তাদের প্রাথমিক সঙ্গীসাথীরা করেছিলেন। দ্বিতীয়- সে সেখান থেকে প্রস্থান করার কোনো উপায় না পেয়ে তীব্র অসন্তোষের সাথে নিরুপায় হয়ে সেখানে বসবাস করবে”(বাংলা ইসলামী প্রকাশনী ট্রাস্ট, কলকাতা প্রকাশিত ‘পবিত্র কুরআন’, পৃষ্ঠাঃ ৯৮)। পাঠক নিশ্চই মনে মনে ভাবছেন- ভারতে বসবাসকারী মুসলমানেরা এই দুইয়ের মধ্যে কোন পথের পথিক?

পরিশেষে ডঃ আম্বেদকরের ভবিষ্যতবাণী উল্লেখ না করলেই নয়, “হিন্দুদের এই ধারণা ব্যর্থ হতে বাধ্য যে একদিন হিন্দু ও মুসলমান একত্রিত হয়ে একটি জাতিতে পরিণত হবে। এই ধারণাকে আঁকড়ে ধরে রাখার অর্থ হল দিবাস্বপ্ন দেখা। ভরতে মুসলমানদের নিজেরা একত্রিত হয়ে থাকার ইচ্ছা যতটা প্রবল, হিন্দুদের সাথে একত্রিত হয়ে থাকার ইচ্ছার ততটাই অভাব” (আম্বেদকর রচনা সম্ভারঃ খণ্ড-১৫, প্রকাশক-ডঃ আম্বেদকর ফাউন্ডেশন)।

হিন্দু মুসলিম শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস ছিল না ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারেরও। তিনি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে জনবিনিময়ের পক্ষে ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালী হিন্দু-মুসলমান একসাথে পাকিস্তানের সাথে লড়াই করেছিল এবং এর ফলে বাঙালী হিসেবে হিন্দু-মুসলমানের একটা স্থায়ী ঐক্য গড়ে উঠেছে বলে অনেকে আশাবাদী ছিলেন। এই প্রসঙ্গে রমেশচন্দ্র মজুমদারের অভিমত ছিল, “হিন্দু ও মসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোক বিনিময় ছাড়া এর প্রতিকারের আর কোনও উপায় নাই।….. কিন্তু এসব কথায় অন্য লোক দূরে থাকুক বাঙ্গালী রাজনীতিক ও পুরানো বিপ্লবী দলেরও সমর্থন পাই নি। তখন তারা মনে মনে এই আশা পোষণ করছেন যে এইবার বাঙ্গালী হিন্দু-মুসলমানের যে মিলন হল তা যাবচ্চন্দ্রদিবাকরৌ অর্থাৎ আকাশে যতদিন চন্দ্র সূর্য থাকবে ততদিন বজায় থাকবে।….আমি বলেছি- পাঁচটা বছর অপেক্ষা করুন!” (জীবনের স্মৃতিদীপেঃ পৃষ্ঠা-১৯১)।

উপসংহার হিসেবে এই সমস্যার সমাধানের উপায় সম্পর্কে আমাদের কয়েকজন মণীষির মতামত উল্লেখ করবোঃ-

“(এই সমস্যার) সর্বোত্তম সমাধান হবে হিন্দুদের নিজেদের সংগঠিত হতে দেওয়া এবং হিন্দু-মুসলিম ঐক্য নিজেরাই নিজেদের যত্ন নেবে, এটি স্বাভাবিক ভাবেই এই সমস্যার সমাধান করবে।” (ঋষি অরবিন্দ ঘোষঃ India’s Rebirth; April 18, 1923)

“গভর্নমেন্টের সহায়তায় মুসলমানগণ বর্তমানে আমাদের দেশের এবং দেশের উন্নতির পক্ষেও কন্টক স্বরূপ হইয়া পড়িয়াছে- এখন আমরা আত্মশক্তিতে সুপ্রতিষ্ঠিত না হইতে পারিলে মুসলমানগণ সম্পূর্ণ রূপেই আমাদিগকে পিষিয়া মারিয়া ফেলিবে; ফলে ভারতের সভ্যতা, ভারতের কৃষ্টি এবং আমাদের জাতীয় উন্নতি চিরতরেই বিলুপ্ত হইয়া যাইবে।……হিন্দুগণ সাম্প্রদায়িক (Communal) ভিত্তিতে সুসংগঠিত না হইলে ভারতের কোনই কল্যাণ নাই” । (আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুঃ- ‘আমার জীবন কাহিনী’- পুলীন বিহারী দাস, প্রকাশক: – অনুশীলন সমিতি, কলিকাতা, পৃষ্ঠাঃ ১২৮)

“হিন্দুস্থান হিন্দুর দেশ। সুতরাং এ দেশকে অধীনতার শৃঙ্খল হইতে মুক্ত করিবার দায়িত্ব একা হিন্দুরই। মুসলমান মুখ ফিরাইয়া আছে তুরস্ক ও আরবের দিকে—এ দেশে চিত্ত তাহার নাই। যাহা নাই তাহার জন্য আক্ষেপ করিয়াই বা লাভ কি, এবং তাহাদের বিমুখ কর্ণের পিছু পিছু ভারতের জলবায়ু ও খানিকটা মাটির দোহাই পাড়িয়াই বা কি হইবে! আজ এই কথাটাই একান্ত করিয়া বুঝিবার প্রয়োজন হইয়াছে যে, এ কাজ শুধু হিন্দুর,—আর কাহারও নয়”। (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ঃ- ‘বর্তমান হিন্দু-মুসলমান সমস্যা’)

সমাজ সচেতক, বলিষ্ঠ লেখক স্বর্গীয় শিবপ্রসাদ রায় একটি বই লিখেছিলেন- দিব্যজ্ঞান নয় কান্ডজ্ঞান চাই। সেখানে তিনি লিখছেন, “পৃথিবীতে কেউ সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলে না, বলে শুধু হিন্দুরাই। কিন্তু এ কথা বলতে গেলেও যে হিন্দুভূমির দরকার, হিন্দু জনসংখ্যার দরকার, এই কাণ্ডজ্ঞানটুকুও এদের নেই। বাস্তবতা বর্জিত দিব্যভাব, তুরীয়ভাব দাঁড়িয়ে গেছে ভণ্ডামী মিথ্যাচারে আর প্রবঞ্চনায়।…..সংগঠিত হিন্দু সমাজ না থাকলে তেত্রিশ কোটি দেব-দেবী, হাজার হাজার ধর্মগুরু,  পণ্ডিত-রাজনৈতিক নেতা কেউ নিজেদের মর্যাদাকে রক্ষা করতে পারে না, পারবে না; তখন তাদের পালাতে হয়, মরতে হয়, না হয় ধর্মান্তরিত হতে হয়।…….এই খণ্ডিত বঙ্গে এখনও মুসলমানদের সংখ্যা শতকরা ৩০। এই সংখ্যা একান্নতে পৌঁছলেই মার্ক্সবাদ, গান্ধীবাদ, মমতাবাদ, অহিংসার বাণী, সর্বধর্ম সমন্বয়ের চেষ্টা, ভজন, কীর্তন, মালা, টিকি, মহোৎসব, ভোগ-আরতি সব শেষ হয়ে যাবে।  সব ধর্ম সমান, খেটে খাওয়া মানুষের জাত নেই, হিন্দু মুসলিম ঐক্য চাই, এ দেশ ধর্মনিরপেক্ষ,  এখানে শুধু হিন্দুদের কথা বলছেন কেনো ?- এসব বলার জন্য তখন আর কেউ থাকবে না। পূর্ববঙ্গে এই দিব্যজ্ঞান যুক্ত কথা আর কেউ বলে না, বলতে পারে না। ঢাকার রমনার বিখ্যাত কালীবাড়িটা যখন কামান দেগে চূর্ণ করে ট্যাংক দিয়ে সমান করা হলো, তখন কেউ একটা কথা বলে নি।”

উপরের সমস্ত তথ্য পড়ার পরে নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি যে হিন্দ-মুসলিম ঐক্যের সম্ভাবনা এবং বাস্তবতা সম্পর্কে পাঠকের সামনে আমার নিজস্ব মতামত দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। পাঠককে উপরে দেওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করার সাথে সাথে এই তথ্য অধিকাধিক হিন্দুর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাই।

9 Comments

  1. একদম বাস্তব সত্য উৎঘাঠন তাৎপর্যপূর্ণ বিশ্লেষণ। হিন্দু বা নিজ ধর্ম পালন না করে গন্ড মূর্খ মতো অর্বাচীন মন্তব্যে নিজেদের কে ধর্মনেড়েপক্ষ সেক্যুলার প্রমাণ করতে ব্যস্ত সেই কারণে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এর থেকে মুক্তির উপায় “স্ব ধর্মে নিধনং শ্রেয় পর ধর্ম ভয়াবহ”।

  2. মুসলমান দের থোট প্রসেস বুঝার পর যদি কেউ শান্তি তে বাড়ি তে বসে থাকতে পারে তবে সেই মহান হিন্দু !

  3. दशहत बनाओ तो शेर जैसी वरना
    खाली डराना तो कुत्ते भी जानते है
    #कट्टर हिन्दु हो तो खूंखार होना चाहिये

  4. কোরান পড়লে সব বোঝা যাবে ইসলাম কত মহান (বেজম্মা সব )

  5. হিন্দুদের, নিজেদের ধর্ম ,সংস্কৃতি ও অস্তিত্ব রক্ষয় বেদ,উপনিষদ, গীতা,রামায়ন,মহাভারত জানার সাথে সাথে কোরান হাদিস ও ইসলাম প্রকৃত ইতিহাস জানাটা বর্তমান যুগয়োপযোগী.. তাই সহজ সরল হিন্দি,ইংলিশ ও আঞ্চলিক ভাষায় পুস্তক আকারে ও বর্তমান যুগের নতুন প্রজন্মের কাছে টেকনলজির মাধ্যমে বিভিন্ন সর্ট ফিল্ম/মুভি বা ওয়েব সিরিজ এর মাধ্যমে প্রচার প্রসার করা টা আবশ্যিক.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *