ওয়াকফ: দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠার অন্যতম হাতিয়ার (২)

হাদীস ও ইসলামী সংস্কৃতির রীতি অনুযায়ী ধর্মীয় কাজে চিরস্থায়ীভাবে নিজের মালিকানাধীন সম্পদকে উৎসর্গ করাই হচ্ছে ওয়াকফ। যিনি দাতা তাকে বলা হয় ওয়াকিফ এবং যিনি ওয়াকফ সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ করেন তাকে বলা হয় মোতোয়ালি। প্রথম পর্বে আমি বলেছি যে মুসলিম শাসনকালে প্রচুর সম্পত্তিকে ওয়াকফ করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে যে স্বাধীন ভারতে, বিশেষত ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ হওয়ার পরে স্বাধীনতার আগে করা ওয়াকফ সম্পত্তির কোনও বৈধতা থাকা কি উচিত? দেশভাগের পরে অনেক মুসলমান ভারতে তাদের জমি ছেড়ে পাকিস্তানে চলে গেছে। পাকিস্তান থেকে ভারতে এসে অনেক হিন্দু পরিবার সেই সমস্ত খালি জমিতে বসতি স্থাপন করেছে, ব্যবসা শুরু করেছে। সেই সময়ে কোনও জমি ওয়াকফ ছিলো, এই কথা বলে সেই সময়কার রেকর্ড দেখিয়ে আজকে যদি কেউ সেই জমির অধিকার দাবি করে, সেই দাবি কি অনৈতিক নয়? ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত ভারতে আলিবর্দী খাঁ-র করে যাওয়া ওয়াকফের কী মূল্য আছে? দেশভাগের ফলে গোটা দেশটার স্ট্যাটাস পরিবর্তন হয়ে গেল অথচ এইভাবে ওয়াকফ করা জমিগুলোর স্ট্যাটাস আজও অপরিবর্তিত থাকবে? সরকার এই জমির ভাড়া দেবে? তাই ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্টের আগে পশ্চিমবঙ্গের বুকে যত সম্পত্তি ওয়াকফ করা হয়েছে, সেগুলোর ওয়াকফনামা অবৈধ বলে ঘোষণা করা হোক

এখন দেখা যাক আমাদের দেশের ওয়াকফ আইন কী বলছে। এই আইনে রাজ্য সরকারকে নিজের রাজ্যের জন্য ওয়াকফ বোর্ড গঠন করার অধিকার দেওয়া হয়েছে (U/S 13/1 of The Wakf Act, 1995)। এই বোর্ডে কোনও হিন্দু স্থান না পেলেও তারকেশ্বরের হিন্দু মন্দিরের কমিটির মাথায় অনায়াসে একজন মুসলিম বসতে পারেন। ওয়াকফ বোর্ড রাজ্যের সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তির নিয়ন্ত্রক। এই আইন অনুযায়ী রাজ্য সরকার নিযুক্ত একজন সার্ভে কমিশনারের তত্ত্বাবধানে সার্ভের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তিগুলোকে চিহ্নিত করতে হয়((U/S 4/1 of The Wakf Act, 1995) । কমিশনার তার সার্ভে রিপোর্ট রাজ্য সরকারকে দিলে রাজ্য সরকার সেটা ওয়াকফ বোর্ডের কাছে পাঠিয়ে দেয় এবং ওয়াকফ বোর্ডকে এই রিপোর্টের ভিত্তিতে রাজ্যের ওয়াকফ সম্পত্তির একটা তালিকা তাদের অফিসিয়াল গেজেটে প্রকাশিত করতে হয়। আইন বলছে, যদি এই তালিকা সম্পর্কে কারও কোনও অভিযোগ থাকে তাহলে তাকে ওই তালিকা প্রকাশিত হওয়ার দিন থেকে এক বছরের মধ্যে ওয়াকফ ট্রাইবুনালের সামনে দাখিল করতে হবে। এই সময়ের পরে আর কোনও আপীল ট্রাইবুনাল গ্রহণ করবে না এবং প্রকাশিত ওয়াকফের তালিকাই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি কি জানেন যে আপনার জমি ওয়াকফের তালিকাভুক্ত কি না? আপনি কি জানেন এই তালিকা কোথায় প্রকাশিত হয়েছে? আপনি কি জানেন যে ওয়াকফ সম্পর্কিত কোনও অভিযোগের বিচার করার এক্তিয়ার কোনও সিভিল কোর্টের নেই?

ওয়াকফ: দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠার অন্যতম হাতিয়ার (১)

ওয়াকফ আইন অনুযায়ী যে কোনও সম্পত্তির ক্ষেত্রে ওয়াকফ বোর্ড যদি মনে করে যে সেটা ওয়াকফ সম্পত্তি, ওয়াকফ বোর্ড নিজেই তার তদন্ত শুরু করতে পারে, শোকজ নোটিস পাঠাতে পারে এমনকি অর্ডার পাশ করতে পারে। ওয়াকফ বোর্ডের এই আদেশ চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে যদি না সেটা ট্রাইবুনাল কর্তৃক পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ ওয়াকফ বোর্ডকে এক্ষেত্রে সুয়োমোটো পাওয়ার দেওয়া হয়েছে। ওয়াকফ সম্পত্তিতে এনক্রোচমেন্টের অভিযোগের ভিত্তিতে অথবা নিজের উদ্যোগে বোর্ড সরাসরি জায়গা খালি করার আদেশ দিতে পারে। অর্থাৎ আগামীকাল সকাল বেলাতেই ইডেন গার্ডেন, ফোর্ট উইলিয়াম কিংবা আকাশবাণীকে জায়গা খালি করে দেওয়ার নির্দেশ পাঠানোর আইনসম্মত অধিকার ওয়াকফ বোর্ডের আছে।

আমাদের দেশের সব রাজনৈতিক দল মুসলমানদের সামনে নতজানু। ওয়াকফ সম্পত্তি যাতে বেদখল না হয়, তারজন্য সবাই উদ্বিগ্ন। ২০১১ তে ক্ষমতায় আসার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওয়াকফ সম্পত্তি নয়-ছয়ের তদন্তের ভার সিবিআই-এর হাতে তুলে দিতে চান। বিধানসভা নির্বাচনের আগেই তিনি মুসলমানদের এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পরে ৩২টি ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে বিশেষ তদন্তের ভার তুলে দিয়েছিলেন সিআইডি-র হাতে। গত ১১ই ফেব্রুয়ারী, বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে আগে লোকসভায় এই প্রসঙ্গ তোলেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। তাঁর প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুক্তার আব্বাস নকভি বলেন ওয়াকফ সম্পত্তিকে বেআইনী দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করতে কেন্দ্র সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে।মুসলিম সংগঠন এবং নেতারাও ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে মাঝেমাঝেই সুর চড়াচ্ছেন। তারা দাবী করেছেন যে কতকাতায় যে পরিমাণ ওয়াকফ সম্পত্তি আছে তার ভাড়াই ৮০০ কোটি টাকা। দাবি উঠেছে ‘ওয়াকফ সম্পত্তিতে আমাদের অধিকার’।

ভাবুন তো, হিন্দুদের দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষা করা কিংবা সেগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের দেশে কোনও শক্তপোক্ত ব্যবস্থা আছে? কেউ কি ভেবেছে সেকথা? কত দেবোত্তর সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে কেউ কি তার খবর রাখে? আজ সময় এসেছে। দ্বিধাহীন চিত্তে জোর গলায় আওয়াজ তুলতে হবে- পশ্চিমবঙ্গ বাঙ্গালী হিন্দুর হোমল্যান্ড, এর প্রতিটি ধুলিকণার মালিক বাঙ্গালী হিন্দু। দেশভাগের মাধ্যমে আমরা মাটি হারিয়েছি। এখনও আমাদের মাটি কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে বিভিন্নভাবে। ওয়াকফ বিষয়টি একটি ঘমন্ত দৈত্য। আমরা এবিষয়ে সচেতন না হলে এ মাটির দখল ছাড়তে হবে।    

  আরও পড়ুন: দেশ এবং জাতিকে বাঁচতে হলে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারী করতে হবে; প্রয়োজনে সংবিধানের ৩০ ধারা বিলোপ করে সবার জন্য সমান শিক্ষা ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *