এই সরকার কি আদৌ নারী নির্যাতন থামাতে পারবে?

আর জি করের নৃশংস ঘটনার পরেও রাজ্যে প্রতি নিয়ত ঘটে চলেছে নারী নির্যাতনের ঘটনা। মুখ্যমন্ত্রী ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের জন্য কেন্দ্র সরকারের কাছে বারবার আবেদন করছেন। অথচ গত এপ্রিল মাসে আই পি সি-র পরিবর্তে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা চলে এসেছে। দেখা যাক সেখানে নারী নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতে কি কি আইন প্রনয়ণ করা হয়েছে।

ধারা ৬৯:- প্রতারণার মাধ্যমে সহবাস – আসামীর শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড ধারা ৬৫(১):- ১৬ বছরের কম বয়স্ক মহিলার ধর্ষণে আসামীর শাস্তি কমপক্ষে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, পরিস্থিতি সাপেক্ষে যাবজ্জীবন এবং আর্থিক জরিমানা। ধারা ৬৫(২): – ১২ বছরের কম বয়স্ক বালিকার ধর্ষণের ক্ষেত্রে আসামীর শাস্তি কমপক্ষে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, পরিস্থিতি সাপেক্ষে এই আমৃত্যু কারাবাস আর্থিক জরিমানা সহ। ধারা ৭০: – গণধর্ষণের ক্ষেত্রে আসামীর শাস্তি কমপক্ষে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, পরিস্থিতি সাপেক্ষে এই আমৃত্যু কারাবাস আর্থিক জরিমানা সহ। ধারা ৭০(২): – ১৮ বছরের কম বয়সী মহিলার গণধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, যা আই পি সি-তে ছিল শুধুমাত্র যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এছাড়াও পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে শিশু ক্রয়-বিক্রয়ের শাস্তি আগে ছিল ১০ বছরের কারাদণ্ড, যা বাড়িয়ে ১৪ বছর করা হয়েছে।

মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আরও কঠোর শাস্তির জন্য আবেদন করার আগে আপনি রাজ্যের মানুষকে নিশ্চিত করে বলুন- আপনি কি পশ্চিমবঙ্গে নারী নির্যাতনকারীদের উপরোক্ত ধারা অনুযায়ী শাস্তি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন? কামদুনির ঘটনায় সিবিআই নয়, আপনার পুলিশই তদন্ত করেছে। আপনাকে জবাব দিতে হবে কামদুনির ফাঁসির আসামী আজ বেকসুর খালাস কেন? পুলিশ তথ্য প্রমাণ দিতে পারেনি না দিতে চায়নি?

আমাদের রাজ্যে ৪৮৬০০ টি ধর্ষণ এবং POCSO কেস আজ ঝুলে আছে কেন? এই অসংখ্য নির্যাতিতা ন্যায্য বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কেন? সবাই জানে এবং বোঝে যে Justice delayed is Justice denied অর্থাৎ বিচারে দেরী করা মানেই বিচার দিতে অস্বীকার করা। নির্যাতিতাদের বিচার পাইয়ে দেওয়ার সদিচ্ছা আপনার আদৌ আছে? যদি থাকে, তাহলে এতদিন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্র সরকার প্রস্তাবিত ১২৩ টি ফাস্ট ট্র্যাক স্পেশাল কোর্টগুলো আপনি কার্যকর করেননি কেন?

আপনার এই অনীহাই নারী নির্যাতনকারীদের শক্তি, সাহস এবং আত্মবিশ্বাস। তারা জানে যে আপনার তৈরি করা এই সিস্টেম তাদের রক্ষা করবে। তাই আমরা দেখতে পাচ্ছি অভয়া কাণ্ডের পরেও রাজ্যে নারী নির্যাতন অব্যহত আছে।সাম্প্রতিক কালে পশ্চিমবঙ্গে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ নিচে করবো।

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় ওই দুজনের সঙ্গে বেরিয়েছিল কিশোরী। অভিযোগ, ঘুরতে বেরিয়ে কাওয়াখালি এলাকায় কিশোরীকে নিয়ে গিয়ে দুজন ধর্ষণ করে।

স্বাধীনতার মধ্যরাত যখন গোটা বাংলা মহিলারাদের দখলে সেই সময়ে পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড় থানার নান্দুর গ্রামে নৃশংস ভাবে খুন হলেন এক মহিলা। সেখানকার ঝাপানতলা এলাকার নির্জন জাগায় মেলে তরুণীর গালাকাটা মৃতদেহ।

বুধবার সকালে আনন্দপুর থানা এলাকায় ঝোঁপের মধ্যে এক অজ্ঞাতপরিচয় মহিলার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়াল। বুধবার সকাল ৬টা নাগাদ আনন্দপুরের নোনাডাঙা এলাকার প্রাতঃভ্রমণকারীরা প্রথম দেখতে পান মহিলার দেহ। ঝোপের ধারে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল মহিলার দেহ। মৃতদেহের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।

আরজিকর কাণ্ড নিয়ে যেখানে তোলপাড় গোটা রাজ্য। তারই মধ্যে মাদক মিশিয়ে বেহুশ করে একাদশ শ্রেণীর এক নাবালিকা ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠল প্রতিবেশী যুবকের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় অচৈতন্য ওই ছাত্রীর নগ্ন ছবি মোবাইলে ভিডিও করে রীতিমতো ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী ওই যুবকের বিরুদ্ধে।

আরজিকর-কাণ্ডে যখন সর্বত্র প্রতিবাদের ঢেউ, সেই সময় ফের ধর্ষণের অভিযোগ মালদায়। আদিবাসী নাবালিকা স্কুলছাত্রীকে বাড়িতে ডেকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল হাতুড়ে ডাক্তারের বিরুদ্ধে। হবিবপুর থানা এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। নাবালিকার পরিবারের অভিযোগ, মেডিকেল টেস্টের প্রশিক্ষণ দেওয়ার নাম করে বাড়িতে ডেকে ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করেছে এলাকারই এক কোয়াক ডাক্তার। ২৮ অগাস্ট বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে।

হোস্টেলে ওয়াই-ফাই সমস্যা মেটাতে এসেছিলেন ৫ যুবক। অভিযোগ সেই সময় হোস্টেল রুমে অধ্যয়নরত এক ছাত্রীকে যৌন হেনস্থা করে তাদের মধ্যেই একজন । ঘটনার পর ওই ছাত্রী তার রুম থেকে দৌড়ে বেরিয়ে অন্য পড়ুয়াদের ঘটনাটি জানায়।

অভিযোগ, জন্মাষ্টমীর দিন ১০ বছরের ওই নাবালিকাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান অভিযুক্ত ব্যক্তি। তাঁর বাড়িতে ঠাকুর দেখাবেন বলে নাবালিকাকে নিয়ে যান। অভিযোগ, বাড়িতে নিয়ে গিয়ে নাবালিকাকে যৌন নির্যাতন করা হয়। বাড়ি ফিরে ঘটনার কথা জানায় নাবালিকা। হরিদেবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন পরিবারের লোকজন। বুধবার সকালে হরিদেবপুর থানার পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। অভিযোগ, বিকেলেই অভিযুক্তকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। আর নাবালিকাকে পাঠানো হয় হোমে। এরপরই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযুক্তের বাড়িতে ভাঙচুর চালান স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে তাদের ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়। উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগান ওঠে। রাতে অভিযুক্তকে ফের গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ।

দক্ষিণ দিনাজপুরে ১৩ বছরের নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের চেষ্টা। অভিযুক্ত তৃণমূলের বুথের নেতার ছেলে।

এক আদিবাসী নাবালিকাকে গণধর্ষণের অভিযোগ। বাঁকুড়া জেলার ছাতনা এলাকায় জঙ্গলে টেনে নিয়ে গিয়ে স্থানীয় এক নাবালিকাকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠল তিন যুবকের বিরুদ্ধে।

ঘটনাটি ঘটেছে গত 20 অগস্ট, মঙ্গলবার ৷ অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রী সেদিন বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয় ৷ অভিযোগ, জঙ্গলমহল এলাকার রাস্তায় সেই সময় আচমকাই তাঁকে পিছন থেকে টেনে নিয়ে যায় চারজন যুবক ৷ তার মুখ চেপে গভীর জঙ্গলে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা ৷ সেখানে চারজনের মধ্যে তিন যুবক নাবালিকার উপর যৌন নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ ৷ ঘটনার পর নাবালিককে ওই চারজন হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ ৷

৪৬ বছরের মহিলার মৃতদেহ বাঁকুড়ার জঙ্গলে। ধর্ষণ করে হত্যার অভিযোগ।

২২ বছরের তরুণীর গণধর্ষণ। বন্ধুর সাথে শ্রাবণী মেলা দেখতে যাওয়ার সময়ে বর্ধমান-নবদ্বীপ রোডে বন্ধুকে বেঁধে রেখে তরুণীকে গণধর্ষণ করে দুষ্কৃতিরা।

আরজিকর কাণ্ডের মধ্যেই ফের ধর্ষণের নারকীয় অভিযোগ উঠল বোলপুরে। মাথায় বন্ধুক ঠেকিয়ে স্থানীয় তৃণমূল সমর্থকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে গ্রামেরই এক গৃহবধূকে ধর্ষণের। এমনকী আগ্নেয়াস্ত্র তার যৌনাঙ্গে প্রবেশ করিয়ে অত্যাচারের অভিযোগও সামনে এসেছে। পাশাপাশি ওই গৃহবধুর হাত পা বেঁধে নগ্ন অবস্থায় বেশ কিছু ছবি মোবাইলে তুলে নেয়।

৮ বছরের শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ কলকাতার অদূরবর্তী মধ্যমগ্রামে। অভিযুক্তকে আড়াল করার অভিযোগে স্থানীয় তৃণমূল নেতার বাড়িতে চড়াও হল জনতা।

বীরভূমের ইলামবাজারে হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্সের শ্লীলতাহানির অভিযোগ।

১৩ বছরের বালিকার শ্লীলতাহানির অভিযোগ হাওড়ার হাসপাতালে। অভিযোগ হাসপাতালের ল্যাব টেকনিশিয়ানের বিরুদ্ধে।

উপরের ঘটনাগুলি আগস্ট মাসে প্রিন্ট অথবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। কত ঘটনা অপ্রকাশিত থেকেছে তা কে জানে! এর শেষ কোথায়? পশ্চিমবঙ্গে এই সমস্ত ঘটনাবলী রাজ্যের দায়িত্বজ্ঞানহীন একটা নীতির প্রতিফলন- যে গরু দুধ দেয়, তার লাথিও খেতে হয়! তাই দুধেল গাইদের এই প্রশ্রয় দেওয়া, প্রোটেকশন দেওয়া। না দিলে উপরের হুমকি ধমকিকে নিচে বাস্তবায়িত করবে কে? কয়লা, বালি, পাথরের সিন্ডিকেট চালাবে কে? কেন্দ্র সরকারের প্রকল্পের টাকা পঞ্চায়েত স্তর থেকে শুরু করে উপর পর্যন্ত নয়ছয় করে কালিঘাটে পাঠাবে কে? চাকরি দেওয়ার নামে টাকা তোলার সিস্টেম চালাবে কে? গরীব মানুষের রেশনের চাল পাচার করবে কে? এই অরাজকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া, প্রোটেকশন দেওয়া সিস্টেমের বাধ্যবাধকতা, সিস্টেম যিনি চালাচ্ছেন, তার বাধ্যবাধকতা।

সুতরাং এই সিস্টেম যতদিন চলবে, এই নৈরাজ্যও ততদিন চলবে। নৈরাজ্যের অবসানের একটাই পথ- এই সরকারের পতন। ওছাড়া আর কোনও বিকল্প পথ নেই।

5 Comments

  1. জনগণ কে ভাবা দরকার যে লক্ষী ভাণ্ডার চাই, কিম্বা বাড়ির লক্ষীর সুরক্ষা চাই!

    এত গুলি নারী নির্যাতনের ঘটনা কে দেখার পর জনগণ কে বুঝে নিতে হবে, আগামীদিনে কি হতে চলেছে।

  2. লক্ষী ভান্ডার চাই না
    শিক্ষিত হতে চাই
    বঙ্গে শিল্প চাই
    সুরক্ষা চাই
    মানুষের অধিকার চাই
    চাই নিরপেক্ষ পুলিশ প্রশাসন

  3. লক্ষী ভান্ডার চাই না
    শিক্ষিত হতে চাই
    সুরক্ষা চাই
    মানুষের অধিকার চাই
    চাই নিরপেক্ষ পুলিশ প্রশাসন
    খুনি মমতার পদত্যাগ

  4. Mamata Banerjee is an incompetent CM. For 13 years She has made this state a rape state.He has established a gangster rule in this state. She has drawned the state in debt. She has introduced corruption in education and health system. It is difficult for her to run this state. An administrator should be appointed here as early.

  5. পশ্চিমবঙ্গের এই নৈরাজ্য অবশ্যম্ভাবী ছিল । দেশভাগের সময় থেকে আজ পর্যন্ত এই রাজ্যে কোনো জাতীয়তাবাদী সরকার ক্ষমতায় আসে নি । মানুষের মধ্যে ধর্মীয় আবেগের পরিবর্তে উৎসবের আবেশ ঘনীভূত হয়েছে । এই রাজ্যের মানুষ অধিকার ও স্বাভিমান বোধকে বিসর্জন দিয়ে যা কিছু হচ্ছে সেটাকেই ভবিতব্য বলে মেনে নিতে শিখেছে । সাম্যবাদের নামে তিল তিল করে সুপরিকল্পিত ভাবে দীর্ঘ দিন ধরে বৈষম্যের বীজ বপন করে শিক্ষা ও সমাজ ব্যবস্থা কে দুর্বল করা হয়েছে । মানুষ কে কাঙাল করে রেখে রাজনৈতিক মুখাপেক্ষী ও দাবার গুটিতে পরিনত করে শাসন যন্ত্রকে সচল রাখতে সমস্ত সংখ্যাগুরু বিরোধী শাসক সযত্নে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প কে সমাজের বুকে নিক্ষেপ করেছে । এর থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে আত্মবিস্মৃত সংখ্যাগরিষ্ঠ দের আত্মসচেতন ও আত্মনির্ভরতা ফিরিয়ে আনতে হবে । তাদের মাধ্যমে সমস্ত ক্ষেত্রে সাহসী গন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে । শাসক দুর্বল তার শাসন যন্ত্রকে বিকল করতে হবে । তার জন্য প্রয়োজন সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ , সৎ-সাহসী , প্রশাসনিক কর্মদক্ষতা যুক্ত , সমাজে প্রতিষ্ঠিত , কর্মীনিষ্ঠ জাতীয়তাবাদী সুবল নেতৃত্ব ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *